অস্বাভাবিক সূচক পতনের পেছনে কিছু ‘দুষ্ট লোক’

আস্থাহীন পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহের প্রথম কর্মদিন বোরবার সূচক কমেছে ১০ পয়েন্ট। আরও দরপতন হতে পারে এই ভয়ে দ্বিতীয় কর্মদিবসে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়ে—সূচক কমেছে ৩০ পয়েন্ট। এরপর সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবস বুধবার সূচক কমেছে ৩৬ পয়েন্ট। টানা তিন কর্মদিবসের সূচক কমেছে ৮৬ পয়েন্ট। এমন অবস্থাকে অস্বাভাবিক সূচক পতন বলছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। 

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কিছু দুষ্ট লোকের কারণে গত কয়েকদিন সূচকে বড় পতন হয়েছে। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুই-তিন দিনের ব্যাপার, পুঁজিবাজার ভালো হবে।’

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে গত তিন দিনে ৮০ পয়েন্টেরও বেশি সূচক কমেছে। এটা স্বাভাবিক কোনও ঘটনা নয়, স্বাভাবিক পুঁজিবাজার হলে এই সূচক পতন হতো ৭ থেকে ৮ পয়েন্ট। অথচ বাজারে আরেকটি ধসে নেমে এলো। নতুন এই ধসে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা।’

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থনৈতিক মন্দার পর রাজনৈতিক অস্থিরতায় আবারও আস্থার সঙ্কটে পড়েছে বাজারের বিনিয়োগকারীরা। এই টালমাটাল পরিস্থিতির কারণে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার (১৩ আগস্ট) পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। ওই দিনই মিউচুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ থেকে ‌উৎস কর কাটা হবে—এমন খবরে বাজারে আস্থার সঙ্কট আরও তীব্র হয়। এর ফলে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিতে ব্যস্ত হয়ে পরেন। এর পরদিন ১৪ আগস্ট (সোমবার) বড় দরপতন হয়। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরও বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।

এরপর বুধবার দিনের লেনদেন শুরুর আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) সরকারি-বেসরকারি ২২ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে ভারতীয় হ্যাকাররা—এমন খবর ছড়িয়ে পরে। পরে আইসিবি এ খবরকে গুজব বলে জানালেও বিনিয়োগকারীদের ভয় কাটেনি। বিনিয়োগকৃত অর্থ হ্যাকারদের দখলে চলে যেতে পারে এই ভয়ে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি ধুম পড়ে। যা অব্যাহত ছিল দিনের লেনদেনের শেষ সময় পযন্ত। এতে দিন শেষ বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭১ হাজার ৪৩৯ কোটি ১৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। যা নতুন সপ্তাহের শুরুতে ছিল ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৯৯ কোটি ৪৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ তিন দিনে বিনিয়োগকারীদের ৪ হাজার ৬০ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার টাকা উধাও হয়ে যায়। এছাড়া চলতি মাসের ১৬ দিনে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি উধাও হয়েছে ৯ হাজার ৮৩৯কোটি ৪৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।

বিনিয়োগকারী আহসান উল্লাহ ফরাজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ঝুঁকিমুক্ত থাকার জন্য এক বছর আগে স্কয়ার ফার্মা এবং জিপির শেয়ার কিনেছিলাম। গত এক বছর এই শেয়ারগুলো ফ্লোর প্রাইসে আটকা ছিল। অথচ খারাপ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে হাজার হাজার টাকা মুনাফা করছে আমার পরিচিত অনেক বিনিয়োগকারীরা। তাদের দেখা দেখি আমি খান ব্রাদার্স ও ফুয়াং ফুডের শেয়ার কিনেছিলাম। এখন দেখি এই শেয়ারের দামও কমছে। আমি এখন ধরা খেলাম। নিজের পুঁজি তুলে নিতে শেয়ার বিক্রির অর্ডার দিয়েছি কিন্তু বিক্রি করতে পরাছি না।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে থাকায় স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। এটা বাজারের জন্য খুব বেশি ভালো খবর না। দেশ ও অর্থনীতির বর্তমান যে পরিস্থিতি এখনই বাজার ভালো হওয়ার লক্ষণ দেখছি না।’

তবে আশার কথা শুনিয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘কিছু দুষ্ট লোকের কারণে গত দুদিন সূচক পতন হয়েছে। আজকেও দিনের শুরুতে বড় দরপতন হয়েছে। তবে দিনের শেষ দিকে ইতিবাচক ধারায় লেনদেন হয়েছে।’

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com