করোনার ভয় রাতারাতি বদলে দিল ভাগ্য, কোটিপতি হলেন কেরালা-ফেরত তরুণ!
এই গরমেও আর গায়ে তাপ লাগছে না ইজারুলের। সে যে এখন কোটিপতি।
অথচ কয়েক দিন আগেও কী গরম লাগছিল তাঁর। করোনা আতঙ্কে পড়িমরি করে কেরালা থেকে হাওড়া ফিরেছেন সাধারণ কামরায়। গায়ের উপর গা-লাগিয়ে ঠেসে বসেছিল অনেকে। ভেবেছিলেন, ইস যদি টাকা থাকত, তাহলে এসি কামরায় আসা যেত। ফের শিয়ালদহ স্টেশন থেকে লালগোলা প্যাসেঞ্জারেও সেই ভিড়।
শনিবারও তাঁর বেলডাঙার মির্জাপুরের বাডি়তে ভিড় করেছেন অনেকে। আগের দিনে স্কুল ফাইনালে ভালো রেজাল্ট করলে যেমন দশ গাঁয়ের লোক দেখতে আসত, অনেকটা সেইরকম। আঞ্জুরা বিবি, ইজারুল শেখের স্ত্রী, বাড়িতে কুটুম এলে এতদিন চা-বিস্কুট দিতেন। দু’দিন ধরে এখন সকলের মুখে তুলে দিচ্ছেন গ্লাস ভরা লেবুর শরবত। আঞ্জুরা বলেন, ‘শ্বশুরের দিনমজুরি আর ওর পাঠানো টাকায় এতদিন জোড়াতালি দিয়ে সংসার চলত। এর মধ্যে করোনা আতঙ্ক। কেরালায় রাজমিস্ত্রির কাজ ছেড়ে বাড়ি চলে এসেছে স্বামী। কী করে এ বার সাত জনের সংসার চলবে, তা নিয়ে আমরা দু’জনে ভাবছিলাম। এরই মধ্যে আল্লাহ আমাদের দুঃখকষ্ট দূর করলেন।’
বেলডাঙার মির্জাপুরের শীতলপাড়া এলাকায় প্লাস্টার না-হওয়া দু’কামরার ঘরে স্ত্রী, তিন ছেলেমেয়ে, মা-বাবাকে নিয়ে সংসার ইজারুলের। এলাকায় রাজমিস্ত্রির মজুরি ৫০০-৬০০ টাকা। কিন্তু কেরালায় দিনে হাজার থেকে বারোশো টাকা। তার উপর আছে ওভার টাইম। তাই গ্রামের অনেকের সঙ্গে অনেক দিন ধরে তাঁর ঠাঁই ভিন রাজ্যে। গত বন্যায় প্রাণ হাতে করে ফিরেছিলেন কেরালা থেকে। গ্রামে কাজ নেই তাই আবার গেছেন রাজমিস্ত্রির কাজে। ইজারুলের কথায়, ‘করোনা নিয়ে আতঙ্ক আছে এটা ঠিক। কিন্তু তার থেকেও বড় ভয়, বড় আতঙ্ক কাজ না-থাকা।’
তিনি বলেন, ‘দিন সাতেক আগে আমি বাড়ি ফিরে আসি। কিন্তু জমানো টাকা ফুরালে কী ভাবে সংসার চলবে তাই নিয়ে চিন্তা ছিল। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে গত বুধবার বেলডাঙায় গিয়ে লটারির টিকিট কিনি। বৃহস্পতিবার জানতে পারি আমি কোটিপতি হয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে বেলডাঙা থানার বড়বাবুর সঙ্গে গিয়ে দেখা করি। তিনি আমাকে সবরকম সাহায্য করেন।’
প্রতিবেশী সাবির শেখ বলেন, ‘খুব অনটনের সংসার ওদের। কিন্তু করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে কেরালা থেকে। যাই হোক লটারি কেটে ওর জীবন বদলে গেল।’ বেলডাঙা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানকার অনেক ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে দিল্লি, মুম্বাই কেরালা থাকে। করোনা আতঙ্কে অনেকে বাড়ি ফিরে এসেছে। জমানো টাকা শেষ হলে আর করোনার আতঙ্ক মিটলে ওরা আবার ভিন রাজ্যে চলে যাবে।’
ইজারুল অবশ্য আর কেরালায় যাবেন না। তিনি বলেন, ‘কাজ নেই তাই এমনিই লটারির টিকিট কেটেছিলাম। কোটিপতি হব কোনদিন ভাবিনি। এ বার একটা ভালো বাড়ি করতে চাই। ছেলেমেয়েদের অনেক উঁচু ক্লাস পর্যন্ত পড়াব। ব্যবসা করব। বাড়িতেই থাকব। পরিবারের সঙ্গে বাকি জীবনটা কাটাব।’ তাঁর মা মামুরা বিবি বলেন, ‘সারা জীবন ধরে বড় কষ্ট করেছি। এবার হয়তো একটু সুখ আসবে। ছেলেকে আর রাজমিস্ত্রির কাজ করতে দেব না।’ কেন? ‘সে যে এখন কোটিপতি’ পাশ থেকে বললেন এক প্রতিবেশী।