যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় আঘাত হানতে পারে হ্যারিকেন হিলারি। ঝড়টি আঘাত হানার আগে সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা পূর্বাভাসে বলেছেন, হিলারির প্রভাবে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হবে— তা সাধারণত ওই অঞ্চলে এক বছরে হয়ে থাকে। মানে এক বছরের বৃষ্টি একদিনে হতে পারে।
আর গত ৮৪ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আঘাত হানতে যাওয়া কোনো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের প্রভাবে এমন অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে সেখানে দেখা দিতে পারে বিপর্যয়কারী বন্যা।পৃথিবীর অন্যতম উন্নত দেশ হলেও যুক্তরাষ্ট্রে অনেক মানুষকে থাকতে হয় রাস্তায়। নিজস্ব বাড়ি-ঘর না থাকা এবং ভাড়া দেওয়ার সাধ্য না থাকায় যেখানে সেখানে ঘুমাতে হয় তাদের। অন্য রাজ্যগুলোর মতো ক্যালিফোর্নিয়াতেও অনেক মানুষ রাস্তায় বসবাস করেন। আর এই ঝড়ের কারণে এখন তাদের নিয়েই সবচেয়ে বড় চিন্তা তৈরি হয়েছে।গৃহহীন এসব মানুষ শুধু রাস্তায় নয়— এমন এমন জায়গায়ও থাকেন— যেখান দিয়ে প্রাণীর স্রোত বয়ে যায়।
এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে সতর্কতা জারি করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টি বিভাগ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে সংস্থাটি বলেছে, ‘ঝড়ের আগে ও পরে পানি চলাচলের রাস্তা এবং বন্যার চ্যানেল থেকে দূরে থাকুন।’ সংস্থাটি জানিয়েছে, এ ব্যাপারে তারা কাজ করছে।
এছাড়া গৃহহীনদের নিয়ে কাজ করছে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবক সংস্থাও। তারা লস অ্যাঞ্জেলসের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে গৃহহীনদের ত্রিপল এবং প্লাস্টিকের ব্যাগ দিচ্ছেন, যেন হ্যারিকেন আঘাত হানার সময় তারা নিজেদের এবং মালপত্র শুকনো ও নিরাপদ রাখতে পারেন।
গৃহহীনদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন আন্দ্রিনা নিস নামের এক নারী। তিনি বলেছেন, এই ঝড়ের কারণে যদি কোনো মৃত্যর ঘটনা ঘটে তাহলে সেটি গৃহহীনদের মধ্যেই বেশি হবে। তারাই মূলত সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে আছে।
ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের শুধুমাত্র লস অ্যাঞ্জেলসেই ৭৫ হাজার মানুষের কোনো বাড়ি নেই। বাধ্য হয়ে তাদের রাস্তায় থাকতে হয়।
অধিকারকর্মী আন্দ্রিনা নিস বলেছেন, ‘এ মানুষগুলোই মরতে যাচ্ছে। প্রতিবার এ ধরনের বিপর্যয় হয়, আর মৃত্যু ঘটে। যেগুলো ঠেকানো যেত।’
ক্যালিফোর্নিয়া সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল প্রফেসর এবং গৃহহীন অধিকারকর্মী ডক্টর মার্গট কুশেল বলেছেন, ‘যারা রাস্তায় থাকেন তারা ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। বন্যার পানিতে তারা ভেসে যেতে পারেন এবং পানিতে ভিজে হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারেন। এছাড়া গাছ ও অন্যান্য বস্তু পড়ে আহত হওয়ার ঝুঁকিতেও তারাই বেশি থাকবেন।’
এর আগে ক্যালিফোর্নিয়ায় ছোটখাটো ঝড়েও গৃহহীন মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত জানুয়ারিতে ঝড়ের সময় তাঁবুর ওপর গাছ পড়ে দুজন নিহত হন। অপরদিকে গত বছর নভেম্বরে ঝড়ের পর তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।