সাম্প্রতিক সময়গুলোতে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে বিশেষ উন্নতি সাধন হয়েছে। এখন ৬ দিন আগে যে পূর্বাভাস দেওয়া যায় আগে তা ২ দিন আগেও দেওয়া যেত না। সম্প্রতি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ আই কে যুক্ত করে বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা ও প্রযুক্তি কোম্পানি আইবিএম। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন-আজহারুল ইসলাম অভি
আগের তুলনায় আমরা এখন অনেক কম সময়ে আবহাওয়ার নির্ভুল পূর্বাভাস পাই। আবহাওয়া ও সামুদ্রিক ডেটা প্রসেসিংয়ে কম্পিউটারের দক্ষতা বৃদ্ধির ফলেই আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এই অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে প্রায় নবজাগরণ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা ও প্রযুক্তি কোম্পানি আইবিএম।
সাধারণত কম্পিউটার সিমুলেশনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মডেলগুলো দিয়ে এখনকার আবহাওবিদরা পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন। এই প্রযুক্তি আধুনিক হলেও এর প্রয়োগে বেশ সময় ও শক্তির প্রয়োজন হয়। কারণ, পদার্থবিদ্যাভিত্তিক সমীকরণ এবং বাতাস, বায়ুচাপ, তাপমাত্রার মতো আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান নিয়ে এই মডেলগুলোকে কাজ করতে হয়; কিন্তু এর চেয়ে কম সময় ও শক্তি ব্যয় করে কীভাবে আরও দ্রুত আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যায়, তার জন্য আইবিএমের তৈরি এআইভিত্তিক ভূ-স্থানিক ‘ফাউন্ডেশনাল মডেল’ ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। নাসার আবহাওয়া ও জলবায়ুসংক্রান্ত ডেটার ভাণ্ডার ব্যবহার করে এই মডেলকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের জন্য ব্যবহার করা হবে। এক বছর আগে নাসা ও আইবিএম যৌথভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের জন্য মডেলটি তৈরির কাজ শুরু করে। ওপেনসোর্স এআই প্ল্যাটফরম ‘হাগিং ফেসে’ মডেলটি পাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্যে এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং এই সাফল্যে বিজ্ঞানীরা অবিভূত। কেনিয়ার কৃত্রিম জলাধার ঘিরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের উত্তপ্ত দ্বীপগুলোর আবহাওয়া বিশ্লেষণেও এই মডেল ব্যবহারে ব্যাপক সফলতা পাওয়া গেছে। এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে আইবিএম ও নাসা মডেলটিকে উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর মধ্যেই পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে নতুন আরেক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে গুগল মালিকানাধীন এআই কোম্পানি ‘ডিপমাইন্ড’।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা আছে নতুন এই যুগান্তকারী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার- এমন দাবি করেছেন নির্মাতারা। উদ্ভাবক কোম্পানিটি বলেছে, এর সহায়তায় কেবল এক মিনিটেই ১০ দিনের আবহাওয়ার ‘অত্যন্ত নির্ভুল’ পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব।
সম্প্রতি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এর নির্মাতারা লেখেন- ৯০ শতাংশ পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রচলিত মানদণ্ডের চেয়ে নতুন ব্যবস্থা বেশি নির্ভুল। ডিপমাইন্ড বলেছে, জলবায়ু সংকটের সময় গ্রাফকাস্টের দাবদাহবিষয়ক অনুমান বিশেষভাবে কাজে লাগতে পারে। আর এটি বিভিন্ন এমন জায়গার তাপমাত্রা অনুমান করতে পারে, যেগুলোতে ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকি রয়েছে। এর ফলে দাবদাহ আসার আগেই সম্ভাব্য প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ মিলবে। যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড় লি ৯ দিনের মধ্যে নোভা স্কশিয়ায় আঘাত হানবে বলে গত সেপ্টেম্বরে নির্ভুলভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল গ্রাফকাস্ট। এটা আগের মডেলের চেয়ে তিন দিন কম ছিল।