ফ্র্যাঞ্চাইজ টি-২০ লিগে ১২তম শিরোপা জিতেছেন আন্দ্রে রাসেল। অধিনায়ক হিসেবে এটিই তার প্রথম ট্রফি জয়। বিপিএলের ইতিহাসে চ্যাম্পিয়ন হওয়া প্রথম বিদেশি অধিনায়কও তিনি। বঙ্গবন্ধু বিপিএল দুই হাত ভরে দিয়েছে এই ক্যারিবিয়ানকে। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে টুর্নামেন্ট-সেরা ক্রিকেটারও হয়েছেন তিনি। ব্যাটিংয়ে ২২৫ রান, বোলিংয়ে ১৪ উইকেট নিয়েছেন রাসেল। তার নেতৃত্বেই গত শুক্রবার ফাইনালে খুলনা টাইগার্সকে ২১ রানে হারিয়ে বিপিএলের শিরোপা জিতেছে রাজশাহী রয়্যালস।
লিটন দাস, আফিফ হোসেনের মতো বাংলাদেশি তরুণেরা রাজশাহীর হয়ে পারফর্ম করেছেন। ফাইনালে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ইরফান শুক্কুর। এসব তরুণ ক্রিকেটারের যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। তার মতে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফিফ বাংলাদেশের বড়ো সম্পদ হবেন।
বঙ্গবন্ধু বিপিএলে ওপেনিংয়ে রাজশাহীকে দারুণ সার্ভিস দিয়েছে লিটন দাস-আফিফের ওপেনিং জুটি। ফাইনালে ভালো শুরু এনে দিতে না পারলেও বিপিএলের সপ্তম আসরে লিটন ৪৫৫ রান, আফিফ ৩৭০ রান করেছেন। টুর্নামেন্ট জুড়ে আফিফদের পারফর্ম করতে প্রেরণা জুগিয়েছেন রাসেল।
ফাইনালে ম্যাচ জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহীর অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমি যেখানেই খেলি, তরুণ ক্রিকেটারদের সব সময় উত্সাহ দেওয়ার চেষ্টা করি। ছক্কা হাঁকানোর সবচেয়ে বড়ো কৌশল হলো শক্তিশালী হওয়া। আফিফ লিটনের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার।’
লিটন-আফিফের প্রশংসায় রাসেল বলেছেন, ‘লিটন যদি আরো শক্তিশালী হতে পারে, তাহলে সে আরো বেশি আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার হয়ে উঠবে, যেটা আপনারা চাইছেন। আফিফ সেরা অলরাউন্ডারদের মধ্যে একজন হয়ে উঠবে। সে অনেক চতুর। বোলিংয়ের দিক দিয়ে জানে কী করতে হবে। ব্যাটিংয়ে সব রকমের শট আছে।’
বিদেশি হলেও রাজশাহী দলটাকে ভালোভাবেই পরিচালিত করেছেন রাসেল। বিপিএলের শিরোপা তার কাছেও বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছে। তিনি বলেছেন, ‘এই শিরোপা আমার জন্য একটু বেশি স্পেশাল। কারণ অধিনায়ক হিসেবে এটিই আমার প্রথম শিরোপা। চাপকে জয় করে খেলা, বোলিংয়ের সময় ঠিকঠাক দল চালানো, একই সঙ্গে নিজেকেও ঠিকঠাক ব্যবহার করা—অন্যরকম অনুভূতি।’
বিপিএলে অনেকটা নিয়মিত মুখ রাসেল। অতীতের তুলনায় এবার উইকেট ভালো ছিল টুর্নামেন্ট জুড়ে। উইকেটের প্রংশসা করেছেন এই ক্যারিবিয়ান। তিনি বলেছেন, ‘কিউরেটররা খুব ভালো কাজ করেছে এবার। উইকেট খুব ভালো ছিল। স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হয়েছে। ব্যাটসম্যানরা সহায়তা পেয়েছে, পেসারদের জন্যও উইকেটে কিছু ছিল।’
ফাইনালে হেরে যাওয়া খুলনার অধিনায়ক মুশফিকও কিউরেটর-গ্রাউন্ডসম্যানদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। উইকেটের প্রশংসা করে মুশফিক বলেছেন, ‘কিউরেটদের টুপি খোলা অভিনন্দন। এক-দুই ম্যাচ ছাড়া টুর্নামেন্ট জুড়ে আমরা ভালো উইকেট পেয়েছি। আপনি যদি অন্য সব বিপিএলের সঙ্গে তুলনা করেন, ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট দেখেন, বোলারদের ইকোনমি দেখেন (তাহলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে)।’
এমন উইকেটে খেলা বিদেশ সফরে ক্রিকেটারদের সাহায্য করবে বলে মনে করেন মুশফিক। তিনি বলেছেন, ‘বোলারদের জন্য, আমার মনে হয়, বিশ্বব্যাপী উইকেট এমনই ফ্ল্যাট থাকবে। তাদেরও অনেক কাজ করার বাকি আছে। আশা করি, তারাও চ্যালেঞ্জগুলো নেবে, কীভাবে বৈচিত্র্য বাড়ানো যায়, যেন পাওয়ার প্লেতে কিংবা ডেথ ওভারে আরো কম রান দিতে পারে।’
এক নজরে বঙ্গবন্ধু বিপিএল
সেরা ব্যাটসম্যান
নাম দল ম্যাচ রান
রাইলি রুশো খুলনা ১৪ ৪৯৫
মুশফিকুর রহিম খুলনা ১৪ ৪৯১
লিটন দাস রাজশাহী ১৫ ৪৫৫
শোয়েব মালিক রাজশাহী ১৫ ৪৫৫
ডেউইড মালান কুমিল্লা ১১ ৪৪৪
সেরা বোলার
নাম দল ম্যাচ উইকেট
মুস্তাফিজুর রহমান রংপুর ১২ ২০
মোহাম্মদ আমির খুলনা ১৩ ২০
রুবেল হোসেন চট্টগ্রাম ১৩ ২০
রবি ফ্রাইলিঙ্ক খুলনা ১৪ ২০
শহীদুল ইসলাম খুলনা ১৩ ১৯
চ্যাম্পিয়ন: রাজশাহী রয়্যালস
রানার্সআপ: খুলনা টাইগার্স
টুর্নামেন্ট সেরা: আন্দ্রে রাসেল
মোট ছক্কা ৬২১
মোট চার ১১৪৫
দলগত সর্বোচ্চ ২৩৮/৪ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স
দলগত সর্বনিম্ন ৬৮ রংপুর রাইডার্স
ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১১৫* নাজমুল হোসেন শান্ত
সর্বোচ্চ রানের জুটি ১৬৮* মিরাজ-মুশফিক
সবচেয়ে বেশি ছক্কা ২৩টি রাইলি রুশো
ইনিংসে সেরা বোলিং ৬/১৭ মোহাম্মদ আমির
সবচেয়ে বেশি ক্যাচ ১১ রাইলি রুশো
সর্বোচ্চ ডিসমিসাল ১৫ নুরুল হাসান সোহান